প্রতিদিন কত নতুন মানুষ বাগান শুরু করছেন। কিন্তু গাছ লাগানোর সখ অনেক হলেও গাছ বাঁচাতে পারছেন না। বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও দেখছেন।নিজেও কনফিউজ হচ্ছেন এর গাছ কেও কনফিউজ করছেন। নয় গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে, বা হলুদ পাতা হয়ে ঝরে পড়ছে বা গাছ এ ফুল আসছে না, বা গাছ লাগানোর পর থেকে গাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এই সমস্ত সমস্যার কিছু গোড়ার কথা আজ আলোচনার বিষয়বস্তু।
(১) সঠিক টব নির্বাচন - মাটির টবে গাছ লাগান। বিশেষ করে যে সমস্ত গাছ বাইরে থাকে অর্থাৎ আউটডোর প্লান্ট , সে সব গাছ এর ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন অবশ্যই মাটির টব নির্বাচন করতে। চারা গাছ এর ক্ষেত্রে ছোট টব নির্বাচন করবেন। অনেক সময় ছোট চারা তুলনামূলক বড়ো টবে বসালে জল বেশি হয় গাছ মারা যায় ।
(২) টবের drainage system - খোলাম কুঁচি দিয়ে টবের নিচের ফুটো ঢেকে দিয়ে তার ওপর কিছু নুড়ি পাথর ছড়িয়ে দিয়ে তার ওপর হাফ ইঞ্চি লাল বালি (যেটা বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহার হয়) দিয়ে ঢেকে দেবেন। এতে টবের জলনিকাসী যে ফুটো (ড্রেনেজ হোল ) থাকে তা কখনো আটকে যাবে না।
৩. মাটি প্রস্তুতি - সাধারণ বাগানের মাটি রোদে শুকিয়ে গুড়ো গুড়ো করে বালি চালনি দিয়ে চেলে নিতে হবে। ৩০ শতাংশ সেই চালা সাধারণ মাটি, ৩০ শতাংশ নদীর সাদা বালি , ৩০ শতাংশ ভার্মি কম্পোস্ট বা ১ বছরের পুরনো গোবর সার বা ১ বছরের পুরনো পচানো পাতা পঁচা সার এবং ১০ শতাংশ কোকোপিট এক সংগে ভালো করে মিশিয়ে নেবেন। এই নাটিতে প্রায় সব ধরনের গাছ ভালো ভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা বানানো আছে এমন টবে এই মাটি দিয়ে জল দিলে এক থেকে দু মিনিটের মধ্যে অতিরিক্ত জল টবের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এতে মাটিতে ভিজে ভাব বজায় থাকবে কিন্তু টবের মাটিতে অতিরিক্ত জল জমা হয়ে গাছের শেকড় পচিয়ে দেবে না।
(৪) নতুন গাছে সার - নতুন গাছ বসিয়ে গাছ যতক্ষণ না গাছ সেই নতুন মাটিতে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে , ততক্ষণ কোনো সার দেবেন না। নতুন পাতা বের হলে বুঝবেন গাছ নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। এর পর থেকে নিয়মিত সার দেওয়া শুরু হবে।
(৫) প্রধান সার - মাসে একবার ১০-১২ ইঞ্চি টবে র জন্য - ৫০ গ্রাম ভার্মিকম্পোস, ১০ গ্রাম (২ চা চামচ) হাড়গুঁড়ো, ৫ গ্রাম সাদা পটাশ বা বায়ো পটাশ) এক সংগে মিশিয়ে নিয়ে টবের চার ধারের মাটি একটু তুলে নিয়ে সেই খানে এই মিক্স সার টা মিশিয়ে দিতে হবে। জবা গাছে তিন মাসে একবার হাড়গুঁড়ো মেশালেই হবে। বর্যাকাল ছাড়া অন্য সময় মাসে দুবার খোল ভেজানো জল ১:১০০ অনুপাতে দেবেন। এতেই গাছ প্রতি মাসে দরকার মতো প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফরাস আর পটাশ পেয়ে যাবে। নতুন বাগানীরা প্রথম বছরে ইউরিয়া, ডি এ পি ব্যাবহার করবেন না। রাসায়নিক সার কম দিলে কাজ হয় না, আবার সামান্য বেশি হয়ে গেলে দেখবেন চোখের সামনে আপনার প্রিয় গাছের সব পাতা হলুদ হয়ে ঝরে যাচ্ছে।
(৬) গাছের অন্যান্য পুষ্টিমৌলো : গাছে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ ছাড়াও গাছের আরও কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান দরকার পড়ে। তাই প্রতি মাসে একবার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (এপসম সল্ট) এবং মাইক্রোনিউট্রিএন্টস স্প্রে করতে হবে। দুটো মাইক্রোনিউট্রিএন্ট বাগানীদের দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় - Agromin gold এবং mobomin, এদের যে কোনো একটা ব্যবহার করলেই চলবে । এতে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া, ফুল ফল ঝরে যাওয়া অনেকাংশেই কমে যাবে।
(৮) গাছের ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিকার - গাছ কে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রতি মাসে একবার ফাঙ্গিসাইড স্প্রে করতে হবে। বর্ষার সময় আউট ডোর গাছে তিনবার স্প্রে করতে হয় ১০ দিন অন্তর।
বাজারে জনপ্রিয় ফাঙ্গিসাইড - সাফ, ব্যভিস্টিন, এম ৪৫, টাটা মাস্টার, রিডমিল গোল্ড , ব্লু কপার , ব্লাইটক্স ইত্যাদি। এদের মধ্যে কমপক্ষে যে কোনো দুটো ব্যবহার করবেন। গাঁদা গাছের ক্ষেত্রে সাফ এবং ব্যভিস্টিন ব্যবহার করবেন না। গাছ পুড়িয়ে দেবে। গাঁদা গাছের জন্য হেক্সাকোনাযল ৫% - এই ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করবেন। hexaconazol 5% আছে এমন দুটো জনপ্রিয় ফাঙ্গিসাইড হলো কন্টাফ ৫ই (CONTAF 5E) এবং কন্তাফ প্লাস (contaf plus) ।
(৯) গাছের রোগ পোকা : গাছ থাকলে পোকা আসবেই। কিছু পোকা গাছের রস চুষে খায়, কিছু পোকা পাতা চিবিয়ে খায়, কিছু পোকা গাছে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে দিয়ে যায়। একটা ইন্সেক্টিসাইড বা কীটনাশক দিয়ে সব ধরনের পোকাকে দমন করা যায় না। তাই ৩-৪ টি কীটনাশক নিয়মিত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হয়।
অনেকে নিম তেল ব্যবহার করে। তবে একবার পোকার আক্রমণ হয়ে গেলে নিম তেল কোনো কাজে আসে না।
নিয়মিত ব্যবহার করতে হয় এমন কিছু কীটনাশক -
(ক) কনফিডোর (technical : imidacloprid 17.8%) : অ্যাফিডস , জাসিডস , ট্রিপস এবং বিভিন্ন পাতার রস চুষে খাওয় পোকার ওপর ভাল কাজ করে।
(খ) প্রফেক্স সুপার ( technical : profenophos 40% plus cypermethrin 4%) : লিফ মাইনর , শুঁয়োপোকা , ল্যাদা পোকা, সব ধরনের পাতা চিবিয়ে খাওয়া পোকার ওপর কাজ করে।
(গ) ওমাইট - সব ধরনের মাকড়ের ওপর ভালো কাজ করে।
(ঘ) একতারা - মিলিবাগ বা দইপোকা এর ওপর ভালো কাজ করে।
(ঙ) Agas /Pegasus - সাদা মাছির ওপর কাজ করে।
(চ) সুপার সোনাটা - একধারে লাল মাকড় দমনে এবং সাথে গাছের এর ফুল ফল আনতে বুস্টার হিসেবে কাজ করে।
(ছ) রগড় বা টাফগর - পাতা কুকড়ে যাওয়া, নৌকোর মত হয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন চোষক পোকার থেকে রক্ষা করে।
Confidor এবং Rogor/Tafgor নিয়মিত 10 দিন অন্তর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করবেন। কোনো সময় কোনো একটাকে skip করে তার জায়গায় সুপার সোনাটা ব্যবহার করবেন।
Actara কেবল মাত্র মিলি বাগ এলেই কেবলমাত্র ব্যবহার করবেন, অন্য সময় নয়।
Pegasus / Agas সাদা মাছি ছাড়াও thrips and mites এর ওপরেও কাজ করে।
নিয়মিত যদি force জল স্প্রে করতে পারেন তাহলেও অধিকাংশ পোকামাকড়ের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।
***** গাছ এবং এই সমস্ত সার, কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক কিনতে চাইলে যোগাযোগ করুন SIMPLE PLANT SOLUTION ৮২৯৬৫৯০৬৬৩ নম্বরে *****
0 comments:
Post a Comment