জমিতে আম চাষের সম্পূর্ণ পরিচর্যা
আম সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় এবং উপাদেয় ফল। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ’এ’ থাকে। আম থেকে চাটনি, আচার, জেলী, মোরব্বা, আমসত্ব, জুস প্রভৃতি তৈরী করা যায়।
জলবায়ু ও মাটি :
২০ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা আম চাষের জন্য উপযুক্ত। আম গাছ যে কোন প্রকার মাটিতে জন্মায় তবে গভীর, সুনিষ্কাশিত উর্বর দোঁ-আশ মাটি আম চাষের জন্য উপযুক্ত ।
জাত :
আম পাকার সময় অনুসারে আমের জাত সমুহকে আগাম, মাঝ মৌসুমী এবং নাবি এ তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- আগাম জাত : যে সব জাত মধ্য মে – মধ্য জুন মাসের মধ্যে পাকে সেগুলো আগাম জাতের অর্ন্তভূক্ত। যেমন- বারি আম-১ (মহানন্দা), গোপালভোগ, খিরসাপাতি, বৃন্দাবনী ইত্যাদি।
- মাঝ মৌসুমী জাত : যে সব জাত মধ্য জুন – জুন মাসের মধ্যে পাকে সেগুলো মাঝ মৌসুমী জাতের অর্ন্তভূক্ত। যেমন- বারি আম-২ (লক্ষনভোগ), বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম – ২ (সিন্দুরী), বাউ আম – ৩ (ডায়াবেটিক), ল্যাংড়া, সূর্যপুরী, হিমসাগর, কিষাণভোজ এবং কোহিতুর অন্যতম।
- নাবী জাত : যে সকল জাত জুলাই মাস হতে পাকে সেগুলোকে নাবী জাত বলে। নাবী জাতের মধ্যে বারি আম-৪, বাউ আম -১ (নিলাম্বরী), বাউ আম – ৫ (পলিএ্যাম্বায়নী), ফজলী, আশ্বিনা, কুয়াপাহাড়ী এবং মোহনভোগ অন্যতম।
জমি নির্বাচন ও তৈরী :
আম বাগানের জন্য সেচ- নিষ্কাশন সুবিধা যুক্ত, রৌদ্রময় স্থানে উঁচু থেকে মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত জমিটিকে ভালভাবে চাষ মই দিয়ে আগাছা মুক্ত ও সমতল করে তৈরী করতে হবে। আম গাছ প্রধানত বর্গাকার পদ্ধতিতে রোপণ করা হয়। তবে ষঢ়ভূজী বা হেক্সাগোণাল পদ্ধতিতে রোপণ করা গেলে সমপরিমান জমিতে ১৫% গাছ বেশী রোপণ করা যায়।
চারা রোপণের সময় :
জ্যৈষ্ঠ – আষাঢ় মাস এবং ভাদ্র – আশ্বিন মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়
রোপণ দুবত্ব :
বড় আকৃতির জাতের জন্য ৮ -১০ মিটার এবং বামন আকৃতির জাতের জন্য ৫ মিটার দুরুত্ব দেয়া উত্তম।
জমি তৈরী ও সার প্রয়োগ :
জমি ১মি x ১মি x ১মি আকারে তৈরী করতে হবে। প্রতি জমিতে ১৮-২২ কেজি জৈব সার, ১০০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৪৫০-৫৫০ গ্রাম ডিএপি বা টিএসপি, ২০০-৩০০ গ্রাম এমওপি, ২০০-৩০০ গ্রাম জিপসাম এবং ৪০-৬০ গ্রাম জিংক সালফেট সার মিশিয়ে তৈরী করতে হবে।
চারা রোপণ :
জমি তৈরীর ১০-১৫ দিন পর জমির ঠিক মাঝখানে চারাটি রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর জল, খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপরিসার প্রয়োগ :
গাছের বয়স অনুযায়ী নির্ধারিত মাত্রার সারকে সমান দুই বারে গাছে প্রয়োগ করা হয়। ১ম বার জৈষ্ঠ্য- আষাঢ় মাস এবং ২য় বার আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে। বয়স অনুযায়ী গাছের গোড়া থেকে ৩-৪ ফুট বাদ দিয়ে দুপুরের রোদের সময় যতটুকু জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে ঠিক ততটুকু এলাকাতে সার ছিটিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাটি কোপানোর সময় হাতের কনুই গাছের দিকে দিয়ে কোপালে গাছের শিকড় কম কাটা যাবে। গাছের বয়স অনুযায়ী বাৎসরিক সারের মাত্রা নিচে দেওয়া হলো।
- ০২-০৪ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে : ১০-১৫ কেজি গোবর পঁচা সার, ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ১০০ গ্রাম, জিপসাম ১০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১০ গ্রাম
- ০৫-০৭ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে : গোবর সার ১৬-২০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১০ গ্রাম
- ০৮-১০ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে : গোবর সার ২১-২৫ কেজি, ইউরিয়া ৭৫০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম, জিপসাম ২৫০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১৫ গ্রাম
- ১১-১৫ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে : গোবর সার ২৬-৩০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৩৫০ গ্রাম, জিপসাম ৩৫০ গ্রাম, জিংক সালফেট ১৫ গ্রাম
- ১৬-২০ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে : গোবর সার ৩১-৪০ কেজি, ইউরিয়া ১কেজি ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৪৫০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ২০ গ্রাম
- ২০ বছরের উর্ধ্বে গাছের ক্ষেত্রে : গোবর সার ৪১-৫০ কেজি, ইউরিয়া ২কেজি, টিএসপি ১ কেজি, এমওপি ৫০০ গ্রাম, জিপসাম ৫০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ২৫ গ্রাম
সেচ প্রয়োগ :
চারা গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। ফলন্ত গাছের বেলায় মুকুল ফোটার শেষ পর্যায়ে ১ বার এবং আম যখন মটর দানার আকৃতি ধারন তখন একবার সেচ দিতে হবে। রিং / বেসিন পদ্ধতি আম গাছে সেচ প্রদানের জন্য উত্তম।
ডাল ছাঁটাইকরন :
গাছের প্রধান কান্ডটি যাতে সোজাসুজি ১ থেকে ১.৫ মিটার হয় সেদিকে লক্ষ রেখে গাছের গোড়ার সকল ডাল ছেঁটে দিতে হবে।
গাছের মুকুল ভাঙ্গন :
গাছ রোপনের পর গাছের বয়স চার বছর না হওয়া পর্যন্ত গাছের মুকুল ভেঙ্গে দিতে হবে। তা নাহলে গাছটি দুর্বল হয়ে যাবে।
ফল সংগ্রহ :
আমের বোটার দিকে হলুদাভ রং ধারন করলে বা গাছ হতে ২-১টি আধাপাকা আম পড়া আরম্ভ করলে আম গাছ হতে সংগ্রহ করতে হবে। আম গাছ হতে ঝাকি দিয়ে না পেড়ে জালিযুক্ত বাঁশের কোটার সাহায্যে আম সংগ্রহ করা ভালো। আম সংগ্রহের পর বোটাটি নিচের দিকে রাখলে বোটার কশ আমের গায়ে লাগবেনা। বোটার কশ গায়ে লাগলে আমের উপরিভাগ আঠালো হয়ে যায় এবং পাকা আমের উপর তেল ছিটছিটে এবং বাজার মূল্য হ্রাস পায় ।
রোগপোকার দমন :
- আমের অ্যানথ্রাকনোজ রোগঃ
প্রতিকারঃ
গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে প্রতি লিটার জলে ০.৫ মি.লি. টিল্ট -২৫০ ইসি অথবা ডাইথেন এম-৪৫ প্রতিলিটার জলে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের আকার মটর দানার মত হলে ২য় বার স্প্রে করতে হবে।
- সুটি মোল্ডঃ
প্রতিকারঃ
থিওভিট-৮০ ডব্লিউ জি প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ – ৩ বার স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়।
- আমের পাউডারী মিলডিউ রোগঃ
প্রতিকারঃ
থিওভিট-৮০ ডব্লিউ জি প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম হারে অথবা প্রতি লিটার জলে ০.৫ মি.লি. টিল্ট -২৫০ ইসি মিশিয়ে ফুল ফোটার আগে ১ বার এবং আম মটর দানার মত হলে ২য় বার স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়।
- ম্যালফরমেশনঃ
প্রতিকারঃ
১) কান্ডের অঙ্গজ ম্যালফরমেশন পরিস্কার করে বোর্দপেষ্ট (Bordeaux Paste) লাগালে এ রোগ প্রতিকার করা যায়।
২) ফ্লোরাল ম্যালফরমেশনের ক্ষেত্রে মুকুলের ৭৫% শাখা প্রশাখা পাতলা করে দিলে আক্রান্ত মুকুলে ফল ধারণ করে । দমনের জন্য আক্রান্ত মুকুল কেটে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে। সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে গাছে জিংক দ্রবন স্প্রে করলে ফ্লোরাল ম্যালফরমেশন প্রতিরোধ করা যায়।
- লাল মরিচা রোগঃ
প্রতিকারঃ
১) বোর্দ মিক্সার (১ লিটার জলে ১০ গ্রাম চুন এবং অপর ১ লিটার জলে ১০ গ্রাম তুতে মিশিয়ে মিশ্রণটি একত্রিত করে বোর্দ মিক্সার তৈরী করতে হয়, এক্ষেত্রে মিশ্রণ গুলো মাটি অথবা প্লাস্টিক পাত্রে করতে হবে।) ১৫ দিন পর পর ২/৩ বার প্রয়োগ করলে এ রোগ প্রতিকার করা সম্ভব ।
পোকামাকড় দমন :
- আমের হপার পোকাঃ
প্রতিকারঃ
রিপকর্ড / সিমবুস প্রতিলিটার জলে ১ মিঃ লিঃ হারে মিশিয়ে ফুল আসার ১০ দিনের মধ্যে ১ম বার (গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে) এবং গাছে আম মটর দানার মত হলে ২য় বার স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।
- আমের পাতা কাটা উইংভিলঃ
প্রতিকারঃ
১) গাছের নিচের কাট পাতাগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে / মাটিতে পুতে ধ্বংস করতে হবে।
২) প্রয়োজনে গাছে কচি পাতা দেখা দিলে সুমিথিয়ন ৫০ ইসি / ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিঃলিঃ হারে মিশিয়ে স্প্রে করলে এ পোকা দমন করা যায়।
- আমের মাছি পোকাঃ
প্রতিকারঃ
১) পোকা আক্রান্ত ফল সংগ্রহ ও নষ্ট করে দমন করা যায়।
২) বিষটোপ ফাঁদ দিয়ে দমন করা যায়। বিষটোপ প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের সাথে ১ গ্রাম ডিপ্টারেক্স-৮০ এসপি মিশিয়ে তৈরী করতে হয়।
৩) সেক্স ফেরোমন ইউজিনল ট্রাপ প্রয়োগ করে পুরুষ পোকা দমনের মাধ্যমেও এ পোকার আক্রমন প্রতিহত করা যায়। বাগানে ২০-২৫ মিটার পর পর এ ফাঁদ প্রয়োগ করতে হবে।
- ভোমরা পোকাঃ
প্রতিকারঃ
১) আম গাছের মরা ও অতিরিক্ত পাতা শাখা প্রশাখা কেটে পরিস্কার করতে হবে।
২) গাছে ফল ধারণের ১ থেকে ২ সপ্তাহের পর হতে ডায়েজিনন – ৬০ ইসি, সুমিথিয়ন – ৫০ ইসি, লিবাসিড – ৫০ ইসি এর যে কোন একটি প্রতি লিটার জলে ২ মি. লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২বার স্প্রে করতে হবে।
- আমের পাতা খেকো বিছা পোকা / ম্যাংগো ডি-ফলিয়েটরঃ
প্রতিকারঃ
১) কীড়া গুলো প্রাথমিক অবস্থায় দলবদ্ধ ভাবে পাতার নিচে অবস্থান করে । এ অবস্থায় এদের সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
২) কীড়ার গায়ে সুং গুলো পূর্ণতা প্রাপ্তির পূর্বে ডায়েজিনন – ৬০ ইসি, সুনিথিয়ন -৫০ ইসি, লিবাসিড – ৫০ ইসি এর যে কোন একটি প্রতি লিটার জলে ২ মি. লি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৩) ব্যাপক আক্রমণ হলে আগুনে পুড়িয়েও এ পোকা মারা যেতে পারে
অন্যান্য সমস্যা ও প্রতিকার :
আম গাছে এক বছর অনেক ফুল আসে, কিন্তু পরের বছর তেমন আসেনা। এ ধরনের সমস্যা অলটারনেট বেয়ারিং নামে সুপরিচিত। কোন কোন গাছে এক বছর ঠিকমত ফুল ধরে অথচ পরবর্তীতে ২/৩ বছর ঠিকমত ফল ধরেনা। এ ধরনের সমস্যাকে ইরেগুলার বেয়ারিং বলে। এ ধরনের সমস্যার মূল কারন সমন্ধে একেবারে নিশ্চিত হওয়া নাগেলেও বিভিন্ন অবস্থার সঙ্গে সম্পর্ক আছে তাতে সন্দেহ নেই। এগুলো নিন্মরূপঃ
- ক) জাতের বৈশিষ্ট্যঃ কতগুলো আমের জাত আছে যে গুলোতে মোটামুটি কমবেশী প্রতিবছরই ফল দেয়। এগুলোর মধ্যে হিমসাগর, রানী পসন্দ, খুদীখিরসা অন্যতম। অথচ ল্যাংড়া, বোম্বাই ও খিরসাপাতিতে এ সমস্যা বেশী দেখা যায়।
- খ) গাছের ও ডালের বয়সঃ ল্যাংড়া জাতের আম গাছ লাগানোর প্রথম ২০ বছর পর্যন্ত প্রা্য় প্রতি বছরই কমবেশী ফল ধরে অথচ বয়স বেড়ে গেলে এ গুন আর থাকেনা। শীতকাল ছাড়া প্রায় সারা বছরই আম গাছে নতুন ডাল গজায়। তবে বসন্তকালে এধরনের নতুন ডাল গজানোর প্রবণতা বেশী। আর এসময় গজানো ডালে সাধারনতঃ ফুল আসে। কেননা নতুন ডালের বয়স ১০ মাস হলে ফুল ধরার উপযোগী হয়।
- গ) পাতাওয়ালা মুকুলঃ ফজলী জাতের আমে ও আরো কিছু কিছু জাতে নতুন পাতাসহ মুকুল বের হতে দেখা যায়। অথচ অন্য ক্ষেত্রে মুকুলে এ ধরনের কোন পাতা থাকেনা। যে সব গাছে পাতাসহ মুকুল বের হয় সে গাছে প্রতি বছরই মোটামুটি ফল আসে।
- ঘ) ডালের শর্করা ও নাইট্রোজেনের অনুপাতঃ কোন ডালে মুকুল আসতে হলে শর্করা ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ যথেষ্ট থাকতে হবে, তবে শর্করার হার তুলনায় বেশী থাকা উচিত। অথচ এ হার যদি সমান হয় অথবা নাইট্রোজেনেরহার বেশী হয় তবে ডালে মুকুল না এসে পাতা গজাবার সম্ভবনা বেশী থাকে। পাতাওয়ালা মুকুলে পাতাগুলো শর্করা সংগ্রহে সমর্থ হয় বলে পরের বছরেও গাছে মুকুল আসে।
- ঙ) হরমনের প্রভাবঃ বিজ্ঞানীরা মনে করেন কতগুলো হরমনের প্রভাবে গাছে মুকুল ধরতে সহায়ক হয়। কাজেই এ ধরনের হরমন স্প্রে করার ১০-১৫ দিন পরে গাছে ফুল আসে।
- চ) আবহাওয়ার প্রভাব ও রোগ- পোকার উপদ্রবঃ গাছে ফুল আসার সময় আবহাওয়া মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলে পরাগায়নে ব্যাঘাত ঘটে। তার ফলে ফুল ঝরে যায়। তাছাড়া রোগ ও পোকার উপদ্রবে মুকুল আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
- ১) যে সব জাতের আম প্রতি বছর ধরে সে জাতের কিছু কিছু আম গাছ বাগানে অবশ্যই লাগানো উচিত।
- ২) বর্ষার আগে, বর্ষার পরে এবং শীতকালে তিনবার বাগানে চাষ দেওয়া প্রয়োজন।
- ৩) প্রতি বছরই বর্ষার আগে ও পরে সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। যে বছর গাছে বেশী ফল দেবে সে বছর ফল সংগ্রহ করার পর পরই গাছ প্রতি অতিরিক্ত দেড় কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তাতে নতুন পাতা গজাতে সাহায্য করে।
- ৪) শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে রসের অভাবে গাছ যেন কষ্ট না পায় এজন্য নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
- ৫) রোগ ও পোকামাকড় সময়মত দমন করতে হবে।
- ৬) গাছের পরগাছা এবং রোগাক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়া ডাল অবশ্যই সময় মত ছেটে ফেলতে হবে।
- ৭) বাগানে মৌমাছি পালন ব্যবস্থা নিলে পরাগায়নে সহায়তা হয়।
- ৮) গাছ যদি খুব বেশী বাড়ে তবে আগষ্ট- সেপ্টেম্বর মাসে ২ সে: মি: গোল করে কিছু ডালের বাকল উঠিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া গাছের বয়স অনুপাতে গোড়া কোপিয়ে ৩-৫ কেজি লবণ প্রয়োগ করে জল দিলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
- ৯) মশুর দানার মত গাছে ফল ঝরতে দেখা গেলে প্ল্যানফিক্স নামক হরমোন ১০ লিটার পানিতে ২-৩ মি: লি: মিশিয়ে ২-৩ সপ্তাহ পর পর স্প্রে করলে ফল ঝরা বন্ধ হয়।
আম গাছে প্রচুর মুকুল আসলেও ফল না ধরার কারণ ও তার সমাধান
আম গাছে প্রচুর মুকুল দেখা দিলেও আম ধরে না বা খুব কম ধরে, যা একটি গুরুতর সমস্যা। এর অনেক কারণ থাকতে পারে।
- প্রথমত: শোষক বা হপার পোকার উপদ্রবের জন্য এটি হতে পারে। ফুল আসার পর পূর্ণাঙ্গ শোষক পোকা ও তার নিম্ফগুলো ফুলের রস টেনে নেয়। ফলে সমস- ফুলগুলো একসময় শুকিয়ে ঝরে যায়। একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০ গুণ পরিমাণ রস শোষণ করে খায় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে দেয়, যা মধুরস নামে পরিচিত। এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হতে থাকে যার ওপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়।
- দ্বিতীয়ত: মেঘলা আকাশ ও কুয়াশা থাকার কারণে মুকুলে পাউডারি মিলডিউ রোগ দেখা দেয়। ফলে অতি দ্রুত মুকুলের গায়ে সাদা সাদা পাউডারের মতো দেখা দেয় এবং একপর্যায়ে প্রায় সব মুকুল কালো হয়ে ঝরে যায়।
- তৃতীয়ত: গবেষণায় দেখা গেছে, আবহাওয়া, পোকা-মাকড় ও রোগ কোন কারণে এটি ঘটে না। আমের পুষ্পমঞ্জরিতে এক লিঙ্গ ও উভলিঙ্গ ফুল এক সঙ্গে থাকে। ভালো ফলনের জন্য বেশি বেশি উভলিঙ্গ ফুলের দরকার। যে সব গাছে ১০ শতাংশের কম উভলিঙ্গ ফুল থাকে তারা স্বভাবত:ই স্বল্প ফলনশীল জাত। কাজেই ভালো ফলন পেতে হলে এসব জাতের আম চাষ না করাই ভাল।
- চতুর্থত: গাছে ফুল ফোটার সময় কুয়াশা, মেঘলা আবহাওয়া বা বৃষ্টি থাকলে ফুলের পরাগ-সংযোগ ব্যাহত হয়। যার ফলে প্রচুর ফুল ফুটলেও সময় মতো পরাগ সংযোগ না হওয়ায় সেগুলো ঝরে যায় বা ফলন হয় না। তাছাড়া অনেক সময় গাছে অস্বাভাবিক পুষ্পমঞ্জরি দেখা যায়। এমন মুকুলে স্ত্রী ফুলের সংখ্যা খুব কম। ফলে কদাচিৎ ফল উৎপন্ন হয় এবং শেষ পর্যন্ত সেটি টিকে থাকে না। মুকুল ক্রমেই শুকিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গাছে থেকে যায়।
- এ কারণেগুলো নিয়ন্ত্রণ করেও যদি ফল ঝরতে দেখা যায়, তাহলে “প্লানোফিক্স’ ২ মিলি ৪.৫ লিটার জলে মিশিয়ে আম ফলের গুটি মটর দানার মতো হলে একবার আর মার্বেল আকৃতির হলে আর একবার স্প্রে করলে ফল ঝরা বন্ধ হবে।
0 comments:
Post a Comment