১০টি সবজির ফুল ফোটার সময় ও কৃত্রিম পরাগায়ন পদ্ধতি
বেশির ভাগ কুমড়া জাতীয় ফসলে স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল আলাদা ফোটায় পরাগায়নের জন্য অন্য মাধ্যম যেমন কীটপতঙ্গের প্রয়োজন হয়।
পরাগায়ন ঠিকমতো না হলে ফল শুকিয়ে পচে বা ঝরে গিয়ে প্রায় ৯৫% ফলন কমে যেতে পারে। তখন হাত পরাগায়নের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ন করিয়ে দিতে হয়।
➡️পরাগায়ন পদ্ধতি
একটি পুরুষ ফুল নিয়ে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে লাগালে পরাগরেণু স্ত্রী ফুলে লেগে যাবে। অনেক সময় হালকা করে ঘসে দিতে হয়। ব্রাশ দিয়েও করা যায়। এভাবে কৃত্রিম পরাগায়ন সম্পন্ন হয়।
তবে কোন সময় পরাগায়ন করতে হবে, এজন্য কুমড়াগোত্রীয় ফুল কখন ফোটে সে বিষয়ে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই-
✅শসা
শসার পুরুষ ফুল ফোটা বা বন্ধ হওয়া দিনের আলোর দৈর্ঘ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পুরুষ ফুল সাধারণত সকালে ফোটে এরং পরাগরেণু দুপুর ২.০০টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ কর্মক্ষম থাকে এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে নিস্ক্রিয় হতে থাকে। শশার স্ত্রীফুলও সকালে ফোটে তবে ফুল ফোটার ২ ঘণ্টার মধ্যে পরাগায়ন করতে হবে। কেননা গর্ভমুন্ডে খুব কম সময়ের জন্য কর্মক্ষম থাকে।
✅ করলা
করলার ফুল ভোর ৪.০০টা থেকে সকাল ৭.৩০টা এর মধ্যে ফুটতে শুরু করে এবং সকাল ৬.০০ টা থেকে সকাল ৯.৫৫টা পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে ফুটে যায়। পুরুষ ফুলের পরাগধানী সকাল ৬.০০টা থেকে সকাল ৮.৫৫টা পর্যন্ত পরাগরেণু উন্মুক্ত করে। তাই সকাল ৬.০০টা থেকে সকাল ৯.০০টার মধ্যে করলার কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। গর্ভমুন্ডের ধারণক্ষমতা সাধারণত ফুল ফোটার ৮ ঘণ্টা আগে থেকে ফুল ফোটার ১২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।
✅লাউ
লাউ ফসলের ফুল সকাল ৯.০০টা থেকে ফুটতে শুরু করে এবং বিকাল ৪.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল প্রস্ফুটিত হয়। পরাগধানী সকাল ১১.০০টা থেকে ২.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত করে। লাউ ফুল ফোটার পর অল্প সময় খোলা থাকে ফলে লাউয়ের পরাগায়ন বিকাল ৪.০০টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০টার মধ্যে করতে হবে।
✅তরমুজ
আরেকটি সুস্বাদু ফল তরমুজের ফুল ফোটার সময় সকাল ৫.৩০টা থেকে সকাল ৬.৩০টা।পরাগধানী সাধারণত সকাল ৫.০০টা থেকে ৬.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত করে এবং রেণু সকাল ৫.০০টা থেকে দুপুর ২.০০টা পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে। গর্ভমুন্ডের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ২ ঘণ্টা আগে থেকে ৩ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। ফলে খরমুজের কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৫.০০টা থেকে সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হবে।
✅পটল
পটোলের ফুল সাদা। পটোলের পুরুষ এবং স্ত্রী গাছ আলাদা। পটোল একটি উচ্চমাত্রার পর-পরাগায়ন ফসল। এজন্য স্ত্রী এবং পুরুষ গাছের অনুপাত হতে হবে ৯:১ অথবা ১০:১। পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুলের ১৫ থেকে ২৯ দিন পর জন্মায়। তাই পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে রোপণ করতে হয়। পটোল ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন ভোর ৫.০০টা থেকে সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হয়।
✅ঝিঙে
ঝিঙে ফুল বিকালের দিকে ফোটে। ফুল ফোটার সময় সাধারণত বিকাল ৫.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে। পরাগধানী পরাগরেণু বিকাল ৫.০০টা থেকে ৮.০০টা এর মধ্যে উন্মুক্ত করে। পরাগরেণুর কর্মক্ষমতা ফুল ফোটার দিন সবচেয়ে বেশি থাকে এবং ২-৩ দিন পর্যন্ত এটা স্থায়ী হয়। গর্ভমুন্ডের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ৬ ঘণ্টা আগে থেকে ফুল ফোটার ৮৪ ঘণ্টা পর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে ফুল ফোটার দিন বিকাল ৫.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে ঝিঙে ফুলের পরাগায়ন করিয়ে দিতে হবে।
✅চিচিঙ্গা
সন্ধ্যা ৭.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে ফুটতে শুরু করে চিচিঙ্গা ফুল এবং স্ত্রী ফুল ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুটে যায়। পুরুষ ফুলের ফুটতে ১৯ মিনিট থেকে ৩৩ মিনিট সময় লাগে। বিকাল ৪.০০টা থেকে ৫.০০টার মধ্যে পরাগধানী ফাটতে শুরু করে এবং ৩ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭.০০টা থেকে রাত ৮.০০টার মধ্যে পরাগরেণু উন্মুক্ত হয়। চিচিঙ্গা ফুলের কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৬.০০টা থেকে সকাল ৯.০০ টার মধ্যে করতে হবে।
✅কাঁকরোল
কাঁকরোলের পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে ধরে এবং পুরুষ গাছে কুড়ি ধারনের ১৫দিন পরে ফুল ফোটে এবং স্ত্রী গাছে ফোটে ১০ দিন পর। তাই পুরুষ গাছ আগে লাগাতে হয়। কাঁকরোল পুরুষ ফুল ভোর ৪.০০ টার সময় ফুটতে শুরু করে। স্ত্রী ফুল সকাল ৬.০০টা থেকে ৬.২০টার মধ্যে ফুটতে শুরু করে। সকাল ৫.০০টা থেকে ৬.০০টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে। ফুল ফোটার ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরাগায়ন করলে ৬৪% পর্যন্ত ফল ধারণ করে। ১২ ঘণ্টার উপরে গেলে ফল ধারণ ১৭% এর নিচে চলে আসে। এজন্য ফুল ফোটার সাথে সাথে পরাগায়ন করে দিতে হবে।
✅মিষ্টি কুমড়া
মিষ্টি কুমড়া ফুল ভোর ৩.০০টা থেকে ভোর ৪.০০টা পর্যন্ত ফুটতে শুরু করে এবং ভোর ৫.০০টা থেকে ৬.০০ টার মধ্যে সর্বোচ্চ ফুল ফোটে। ফুল সাধারণত ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। ফুটন্ত ফুল সকাল ৮.০০টা থেকে বন্ধ হওয়া শুরু করে এবং ১১.০০টার মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৮.০০টার মধ্যে করতে হবে।
✅চাল কুমড়া
চাল কুমড়ার পুরুষ ফুল সাধারণত ভোর ৪.৩৩টা থেকে ভোর ৪.৪৫টা নাগাদ ফুটতে শুরু করে এবং ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট এর মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল ফুটে যায়। স্ত্রী ফুল ভোর ৪.২০টা থেকে ভোর ৪.৩০টা নাগাদ ফুটতে শুরু করে এবং ২০ মিনিট থেকে ২৫ মিনিট এর মধ্যে সম্পূর্ণ ফুল ফুটে যায়। পরাগধানী সাধারণত রাত ১.৪৫টা থেকে ২.৪০টা এর মধ্যে ফাটতে শুরু করে এবং গর্ভমুন্ডের ধারণক্ষমতা ফুল ফোটার ৬ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু করে ১৬ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। পরাগরেণু ফুল ফোটার ২০ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সজীব থাকে। চাল কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯.০০টার মধ্যে করতে হয়।
⭕সতর্কতা
কৃত্রিম পরাগায়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল দুটি যেন একই সময় ফুটেছে এমন ফুল নির্বাচন করা হয়। বড় ক্ষেত হলে স্প্রে মেশিনে পানি নিয়ে পরাগরেণু মিশিয়ে স্প্রে করা অথবা ড্রপার দিয়ে ফুলে পানির ফোটা দেয়া। তাহলে ফল ধারণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যদি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম পাথুরে চুন এবং ৩ গ্রাম বোরন সার মিশিয়ে পরপর ৩ দিন বিকালে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দেয়া হয় তাহলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা কমে যাবে স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে।
কাজেই আমরা যদি সঠিক সময় নির্ধারণ করে কুমড়াগোত্রের ফসলগুলোর কৃত্রিম পরাগায়ন করতে পারি তাহলে অধিক ফলন পাবো
**** এই গাছ ,সার এবং কীটনাশক কিনতে চাইলে যোগাযোগ করুন SIMPLE PLANT SOLUTION ৮২৯৬৫৯০৬৬৩ নম্বরে *****